যেভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ঘুমের ক্ষতি করছে ??



বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:
তথ্য ও যোগাযোগ বিপ্লবের দুনিয়ায় ২৪ ঘন্টা উচ্চগতির ইন্টারনেট পাওয়া বেশ বড়সড় সুযোগ। কিন্তু এ সুযোগের অপর পিঠে অনেক কিছু বিসর্জনেরও ব্যাপার জড়িত। নতুন এক গবেষণা বলছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আধুনিক যুগের জনজীবনে ঘুমের একটি ক্ষতিকারক। নিদ্রাহীনতা এবং নিম্নমানের ঘুমের সাথে রয়েছে এর নিবিড় সম্পর্ক। বিছানায় যাবার নিকট সময়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার এই সমস্যার দিকে সহজে ঠেলে দেয়।

আধুনিক যুগে এসে অপর্যাপ্ত ঘুম খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ইতোমধ্যেই অপর্যাপ্ত ঘুম যে জনস্বাস্থ্য এবং জনগণের মানসিক দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব রাখছে তা স্পষ্ট। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু গবেষণার ফলাফলে তা উঠে এসেছে।

খারাপ খবর হল, এ সমস্যা দিন যত যাচ্ছে আগের চেয়েও গুরুতর হচ্ছে। বহু উন্নত দেশেও মানুষ কম ঘুমের সমস্যার সম্মুখীন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ৭ থেকে ৯ ঘন্টার ঘুম দেয়ার সংকট দেখা দিচ্ছে। আর এই ঘুমের ঘাটতির সমস্যা বড় হয়ে উঠছে দিনকে দিন।

যখন এ ঘুমহীনতা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, একই সাথে বেড়ে চলছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। আমাদের ঘুমের চক্র ভেঙে দিচ্ছে যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এখন পর্যন্ত খুব কমই প্রামাণ্য উপাত্ত রয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটকে ঘুমের সমস্যার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত দেখানোর ক্ষেত্রে।

ঘুম এবং উচ্চগতির ইন্টারনেটের মধ্যকার সম্পর্ক ও প্রভাব নির্ণয় করতে জার্মান একদল বিজ্ঞানী তাদের দেশের মানুষের উপর একটি জনজরিপ পরিচালনা করেছেন। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকেন তারা অন্যদের তুলনায় গড়পড়তায় ২৫ মিনিট দেরিতে ঘুমিয়ে থাকেন।

ইন্টারনেট এমনিতেই একটি বহুমুখী জগৎ। একে তো বহুমুখী, তার পরে আবার এ জগতের কোনো শেষ নেই। আবার উচ্চগতির ইন্টারনেট সে বহুমুখী জগতের সবগুলো দুয়ার খুলে দেয়। যে কারণে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রলুব্ধ করে অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থেকে ভিডিও গেমস, ওয়েবে ঘোরাঘুরি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটাতে।

মিলানের বক্কোনি ইউনিভার্সিটির জনসংখ্যা তত্ত্বের অধ্যাপক ফ্রান্সেস্কো বিল্লারি ব্যাখ্যা করেন, ব্যক্তি ডিজিটাল দুনিয়ার প্রলোভনে বিছানায় যেতে দেরি করায় ঘুমাতে বিলম্ব হচ্ছে। যাদের দেরিতে ওঠার সুযোগ নেই তারা সেই ক্ষতিপূরণও করতে পারছে না সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে। যে কারণে, ঘুমের দৈর্ঘ্য প্রয়োজনীয় মাত্রার আগেই কেটে যাচ্ছে।

মোটের উপর, গবেষণার তথ্য সংগৃহীত হয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ সমাজের কাছ থেকে যারা রাতে ঘুমের আগে ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করে থাকে।

গবেষকরা ইন্টারনেট আসক্তির ভিত্তিতে টিনেজারদের ঘুমের আচরণের উপর গবেষণা করার আহ্বান জানাচ্ছেন। যেহেতু ইন্টারনেট প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির উপর লক্ষ্য রেখে প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এমন পণ্য উদ্ভাবন করছে যেগুলো একটি অন্যটির পরিপূরক। আর এতে করে ক্রেতা ওইসব পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পারে না। নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ভুলে মানুষ ওইসব পণ্যের ব্যবহারের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

যন্ত্রের যন্ত্রণায় ঘুমকে বাঁচাতে যা করা যেতে পারে:
ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার সন্ধ্যায় সীমিত রাখা।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া।
বিভিন্ন কাজের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে গিয়ে ডিভাইসে বুঁদ হয়ে না যাওয়া। এক্ষেত্রে বারবার সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ঢুঁ না মেরে একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করা।

যন্ত্রের বাইরে জীবন উচ্ছ্বল– একথা মাথায় রাখা ও নিজের শরীর মনের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করা। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে করতে দেরিতে ঘুমাতে যাবার চেয়ে বরং শীঘ্র ঘুমানোর নিয়ত করা যাতে সকালে উঠে ঢুঁ মেরে দেখে নেয়া যায়।
গবেষণাটি জার্নাল অব ইকোনমিক বিহেইভিওর অ্যান্ড অর্গানাইজেশন গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

0/Post a Comment/Comments

আশা করি এই টিউনটি আপনাদের ভাল লাগবে। এই সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট বক্স এ কমেন্ট করুন ! আর নয়তো আমাদের ফেসবুক পেজ এ মেসেজ দিন। টিউনটি ভাল লাগলে ফেসবুক মিডিয়ায় শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিন ।

নবীনতর পূর্বতন

World's great Post